Wikipedia

Search results

কমিউনিকেশনের আদ্যপান্ত


জীবনে আমরা যাদেরই বেশি কথা বলতে দেখি তাদের আমরা বাচাল হিসেবে চিহ্নিত করি।অনেকের হয়ত এই বাচাল প্রকৃতির লোকগুলোকে দেখে বিরূপ ধারণা পোষণ করে।কিন্তু তাদের জীবনাচরণ লক্ষ করলে দেখা যায় তাদের কমিউনিকেশন স্কিল খুব ভালো।এর কারন, তাদের কথা বলার প্রবনতা ও ইগো না থাক।তেমনি এক বাচাল প্রকৃতির লোক শোভন।তার এই স্বভাবকে অনেকেই একটু আড়চোখে দেখলেও তার কিছুই আসে যায় না।শোভন তার বিশাল একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করেছে তার কমিউনিকেশন স্কিলের মাধ্যমে।তাই যেকোন সমস্যায় তাী সমাধান পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়না।অনেক নেটওয়ার্ক তৈরী হওয়ার ফলে শোভনের পরিচিতি অনেক।সেই সুবাদে একবার কমিউনিকেশন স্কিলের উপর একটি সেশন নেয়ার জন্য তাকে  আমন্ত্রণ জানানো হল।সেশনের প্রথমেই শোভন বলল
"আপনারা কি আমার সাথে কথা বলতে রাজি আছেন?" থাকলে হাত তুলেন।এর মাধ্যমে সে একটা অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট তৈরী করল।শোভন মনে করে একটি শক্তিশালী কমিউনিকেশন তৈরী করতে হলে দুপক্ষের মধ্যেই যথেষ্ট আন্তরিকতা থাকতে হবে।সেশন শুরু করে শোভন।

আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ডেভলপ করার প্রধান দুই শর্ত হল আপনার ইগোকে পরিহার করতে হবে আর মানুষের সাথে মেশার মাধ্যমে কথা বলার প্রবণতা বাড়াতে হবে।যতক্ষণ আপনি নিজে আপনার কমিউনিকেশন বাড়াবেন না আপনার নেটওয়ার্কিং ও বাড়বে না।

কমিউনিকেশন শব্দটি এসেছে মূলত গ্রীক শব্দ "কমিউনিকেয়ার" থেকে।এই কমিউনিকেশন প্রসেসটা কাজ করে এইভাবে ---

Sender >  Encoding > Media > Decoding > Receiver > Response >

                                        Noise

Feedback >

মানুষের মস্তিককে একটি মেমোরি বলা হয়।যদিও এর বিশালতা প্রচুর তবুও এই মেমোরী একইসাথে অনেক তথ্য ধরে রাখতে পারে না।একটি প্রসেসের মধ্য দিয়ে তথ্যগুলো অতিবাহিত হয়।প্রসেসটি হল

Delete
Desort
Generalize

প্রতিনিয়তই বিভিন্ন তথ্য আমাদের মস্তিষ্কে ইনপুট হচ্ছে।সবকিছুই কি আমরা মনে রাখতে পারছি?আমাদের মস্তিষ্ক এমন একটি প্রক্রিয়ায় তৈরী সেখানে অটোমেটিক তথ্য মুছে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে।যেসব তথ্য আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় মস্তিষ্ক তা মুছে ফেলে।যা কম গুরুত্বপূর্ণ তা ডিসোর্ট করে রাখে।আর কিছু তথ্য জেনারেলাইজ করে এবং তা আমাদের আউটপুটের মাধ্যমে ডেলিভারী হয়।




কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ৪ টি ব্লক আছে।যাকে আমরা 4 Building Blocks ও বলে থাকি।

* People (মানুষকে বুঝতে হব)
* Listening (শোনার ক্ষমতা বাড়াতে হবে)
* Context (যার সাথে কমিউনিকেশন করছেন তার অবস্থান বিবেচনা করুন।তিনি এখন কি অবস্থায় আছে?তার মুডের উপর ধারণা নিন)
* Message ( নিজের মেসেজটি ডেলিভার করার জন্য তা সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিন)

Impact ছাড়া Action এর কথা চিন্তা করা উচিত নয়।কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে সবসময় কনফিউশন এড়িয়ে চলতে হবে।কনফিউজ কমিউনিকেশনে কমিউনিকেশন কখনো শক্তিশালী কমিউনিকেশন হয় না।

কমিউনিকেশনের সময় যতটা সম্ভব নরমাল বা Cool থাকতে হবে।কারন,যদি আমাদের আচার আচরণ বা বডি ল্যাংগুয়েজে অস্বাভাবিক কিছু প্রকাশ পায় তাহলে অন্যমানুষগুলো আমার সাথে কমিউনিকেশন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।এজন্য নিজেকে ভালোভাবে প্রেজেন্ট করতে হবে।ভালো একটু ইমপ্রেশন তৈরী করতে হবে।এক্ষেত্রে ড্রেসও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।তাই ড্রেস পরিধানের ক্ষেত্রে ভাবতে হবে।

যেই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কমিউনিকেশন হচ্ছে সেই সম্পর্কিত একটি গল্প দিয়ে কমিউনিকেশন শুরু করতে হবে এবং তা করতে হবে হাসিমুখে।কারন,বিভিন্ন থিওরী বা ফ্যাক্টের চেয়ে গল্প আমাদের মস্তিষ্কে মনযোগ আকর্ষণ করে।

কমিউনিকেশন করার সময় যার সাথে কমিউনিকেশন করছেন তার বডি ল্যাংগুয়েজ পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং তার বডি ল্যাংগুয়েজ অনুযায়ী তার সাথে কমিউনিকেশন করতে হবে।তার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আই কনট্রাক বজার রাখতে হবে।এতে একটি বিশ্বস্ততার জায়গা তৈরী হয়।

কথা বলার সময় চেষ্টা করবেন মানুষটির নাম ধরে ডাকার জন্য এবং তার সাথে পুরোনো কোন স্মৃতি থাকলে তা তুলে আনার।তাহলে কমিউনিকেশন আরো শক্তিশালী হবে।

কথা বলার সময় Filler Word কম ব্যবহারের চেষ্টা করবেন এবং একজন ভালো শ্রোতা হয়ে উঠতে হবে।কমিউনিকেশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশই হলো ভালো শ্রোতা হয়ে উঠা।ভালো শ্রোতা না হলে অন্য মানুষের আপনার প্রতি আগ্রহ থাকবে না।ফলে কমিউনিকেশন টি বিপর্যস্ত হতে পারে।

আপনি যদি কারো সাথে কোন কথায় একমত না হন তাহলে তাকে বলতে দিন।কথার মাঝখানে থামাবেন না।এরপর তার কথার সমালোচনা করতে চাইলে সরাসরি সমালোচনায় যাবেন না।এর জন্য Hamburger Theory ব্যবহার করুন।কিন্তু কখনোই তর্ক করবেন না।

অপরকে সম্মান দিন।হয়ত আমরা আমাদের বন্ধুদেরকে কখনো ধন্যবাদ বলি না।কিন্তু বন্ধুদের দ্বারা আমরা অনেক উপকৃত হই।ধন্যবাদ দিন ধীরে ধীরে।এই সম্মান প্রদর্শনটা আপনার কাছেই সম্মান হিসেবে ফিরে আসবে।

আমরা সবাই "না" বলতে একটু অস্বস্তি বোধ করি।না অনেক ভাবেই বলা যায়।কাউকে সরাসরি না বলার চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।যতটা সম্ভব বিভিন্ন উপায়ে না বলার চিন্তা প্রসারিত করুন।

বিজনেস কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে আন্ঞ্চলিকতার টানটা না আনাই উত্তম।মানুষের মনযোগ ধরে রাখার জন্য কমিউনিকেশন বেশি লম্বা না করার চেষ্টা করতে হবে এবং যদি অডিয়েন্সের মনযোগ চলে যায় তা ফিরিয়ে আনার জন্য কমিউনিকেশনের মাঝে মাঝে গিয়ার শিফট করে একটু রিলাক্স অবস্থায় যেতে হবে।

অনেকেই ভাবেন কমিউনিকেশন শুধু ইংরেজীতেই ভালো হতে হবে।আদৌতে কিন্তু এমনটা নয়।আপনি যেকোন একটি ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠতে পারেন।যেই ভাষাই আপনি পছন্দ করেন না কেন সে ভাষায় আপনাকে পারদর্শী হয়ে উঠতে হবে কমিউনিকেশনে।একটু চিন্তা করে দেখুন।আমারদের মাতৃভাষা বাংলা হওয়ার স্বত্ত্বেও কি আমরা বাংলা ভাষায় কমিউনিকেশনে খুব ভালো।বাংলা ভাষার অনেক তত্ত্ব আছে যা আমরা জানিই না।তাই একটি ভাষায় পরিপূর্ণ কমিউনিকেশন করার মত যোগ্যতা অর্জন করে আরেকটি ভাষায় যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করুন।

No comments

Theme images by Mikey_Man. Powered by Blogger.