Wikipedia

Search results

ভালোবাসার আঘাত

জীবনটা বড়ই অদ্ভূত।মূহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় সবকিছু।হয়তবা সেই পাল্টানোটা কারো জীবনের জন্যহয় সুখকর,কারো বা দুঃখময়।আচ্ছা সবার জীবনই কি দুঃখময়।নাকি শুধু আমার জীবনটাই এমন।
এসব অদ্ভূত চিন্তায় নিমজ্জিত আদি।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছে খেয়ালই নেই তার।সাধারনত খুব বেশি কষ্ট না পেলে ছেলেদের চোখে পানি আসে না।কিন্ত আজ অতীতের স্মৃতিগুলো তীরের মত আঘাত করছে কাব্যের বুকে।

হঠাৎ অভির ডাকে বাস্তবে ফিরে আসে সে।অভি কাব্যের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।বলতে গেলে কাব্যের জীবনের একটি অংশ।এককথায় ভাইও বলা যেতে পারে।ছোটবেলা থেকেই দুজন একসাথে বড় হয়েছে।

অভি: কিরে কি ভাবছিস?আর তোর চোখে পানি কেন?
কাব্য: কই কিছু না তো। এমনি।
অভি: আমার কাছে লুকোবি।লুকোতে পারবি?কি লাভ অতীতটা মনে করে শুধু শুধু কষ্ট পাওয়ার।যত মনে করবি ততই কষ্ট বাড়বে।ভূলে যা সব।
কাব্য: ভূলে যাওয়া কি এতই সহজ রে।সবকিছু ভোলা যায় না।
অভি:হুম।কিন্তু এসব নিয়ে যত ভাববি ততই কষ্টটা বাড়বে।কি লাভ এসব নিয়ে চিন্তা করে।
কাব্য:.......
ও। এতক্ষন তো পরিচয়ই দেয়া হয়নি।

ছেলেটির নাম কাব্য রহমান (আদি)।অর্নাস ২য় বর্ষে পড়ে।প্রচন্ড মেধাবী ছাএ।সবার চোখের মনি।পরিবারে মা ছাড়া আর কেউ নেই।বাবা অনেক আগেই পৃথীবির মায়া কাটিয়ে চলে গিয়েছেন।মা বাবার একমাএ সন্তান আদি।তার প্রতিদিনের রুটিনের মত এমনি একদিন ভার্সিটিতে যায় আদি।যথাসময়ে ক্লাস শুরু হয়।কাব্যও ক্লাসে উপস্থিত।হঠাৎ ক্লাসে একটি নতুন মুখ লক্ষ্য করে কাব্য।অপরুপ সুন্দর একটি মেয়ে।অনেক মেয়ে দেখেছে কাব্য।কিন্তু এরকম সুন্দর মেয়ে দেখেনি।ক্লাস শেষ হবার পর বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারে মেয়েটির নাম "অথৈ"।এরপর বাসায় চলে আসে কাব্য।এসে নিজের রুমে বসে বসে ভাবতে থাকতে মেয়েটির কথা।ভাবতে ভাবতে কল্পনার জগতে চলে যায় সে।হঠাৎ মায়ের ডাকে হুশ ফিরে তার।
এরপর থেকে প্রতিদিন মেয়েটিকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত কাব্য।কিন্তু মেয়েটিকে কিছুই বুঝতে দিত না।এভাবেই চলতে থাকে দিন।হঠাৎ একদিন আড্ডার মাঝে প্রেম নিয়ে কথা উঠলে কাব্য ভাবতে থাকে অথৈর কথা।এরপর বাসায় এসে কাব্য ভাবল, "অনেকদিন তো হল,এবার অথৈকে জানানো দরকার"।তাই, সে তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অভিকে বাসায় আসতে বলল।অভি বাসায় আসার পর সব বলল অভিকে।অভি তো শুনে পুরাই টাসকি খেয়ে গেল।যে ছেলে কোনদিন কেন মেয়েদের দিকে ঠিককরে তাকায়নি সে বলছে আজ এ কথা।অবশ্য মনে মনে সে অনেক খুশিই হল।কারন,কাব্য জীবনে প্রথমবার কোন মেয়েকে পছন্দ করেছে।
এরপর বন্ধুদের মাধ্যমে অথৈর সব খবর নিয়ে ফেলল কাব্য।

কিছুদিন পর......

অভি: দোস্ত অনেকদিনতো হল এবার জানানো উচিত।
কাব্য: কিন্তু আমার ভয় করে রে দোস্ত।যদি না করে দেয়।
অভি: আরে ভাই,ভয় করলে প্রেম করতে আসছস ক্যান?
কাব্য:আচ্ছা তুই যা ভালো বুঝস কর।
অভি: তাহলে কালকেই।
কাব্য: আচ্ছা।

পরেরদিন কাব্য কনফিউসান নিয়ে ভার্সিটিতে যায়।কারন আজ অথৈকে সে প্রপোজ করবে।বন্ধুরা অনেক বলার পরও কাব্য যেতে সাহস পেল না।উপায়ান্তর না দেখে অভিই গেল।


অভি:এই যে আপু শুনছেন?
অথৈ: জ্বী,বলুন।
অভি: যদি কিছু মনে না করেন,আপনাকে একটা কথা বলতে পারি?
অথৈ: জ্বী,অবশ্যই।
অভি:আপনি আদিকে চেনেন?
অথৈ: কোন আদি?
অভি:আমাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ে।আমি ওর বন্ধু।
অথৈ:ও।হ্যাঁ। বলুন।
অভি:আসলে ও আপনাকে ভালোবাসে।তবে ভয়ে আপনাকে জানাতে সাহস পায়নি।আপনার মতামত টা জানাবেন প্লিজ।
অথৈ:ভেবে বলব।
অভি: কখন?
অথৈ: কাল আপনার বন্ধুকে দেখা করতে বলবেন।উওরটা তাকেই বলব।

এরপর অভি গিয়ে অথৈ যা যা বলেছে সব বলে কাব্যকে।রাতে আর কাব্যর ঘুম হয়না।সারারাত টেনশন করতে করতেই কেটে যায় তার।
পরেরদিন ভয়ে ভয়ে ভার্সিটিতে গেল কাব্য।গিয়ে দেখে ক্যাম্পাসে অথৈ বসে আছে।কাব্যর খুব ভয় লাগছিল তাই সে পাশ কেটে চলে যেতেই অথৈ বলল দাঁড়াও।

অথৈ:অভি কাল যা বলেছে সব সত্যি?
কাব্য:হ্যাঁ।(মাথা নাড়িয়ে)
অথৈ:নিজে না বলে অন্যকে পাঠালেন কেন?
কাব্য: ভয়ে।(এই প্রথমবার আদি রিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে)
অথৈ: আমি কি বাঘ না ভাল্লুক,যে তোমাকে ভয় পেতে হব?(একটু রেগে)
কাব্য: না। এমনি।

এভাবেই শুরু হয়েছিল তাদের প্রেম।শুরুতে আপনি তে থাকলেও পরে তুমিতে চলে আসে।সারাদিন ধরে হ্যাংআউট,রাতে ফেসবুকে চ্যাটিং এসবের মধ্যে দিয়েই চলছিল তাদের প্রেম।প্রায় ২ বছর হয়ে গেল তাদের রিলেশনের।

গল্পটা এখানে শেষ হলেই পারত।কিন্তু না।

কিছুদিন ধরে কাব্য লক্ষ্য করছে অথৈ কেমন যেন হয়ে গেছে।ঠিকমত কথা বলে না।ফোন দিলে ধরে না আবার ধরলেও কোন অজুহাতে কেটে দেয়।হঠাৎ অথৈর এমন এভোয়েড করার কারণটা বুঝতে পারছিলনা কাব্য।আস্তে আস্তে যোগাযোগ আরো কমতে থাকে।অস্বস্তি বোধ করে কাব্য।তাই একদিন মন ভালো না থাকায় পার্কে ঘুরতে যায় সে।গিয়ে যা দেখে তা দেখে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয় কাব্যর।অথৈ একটি ছেলের সাথে অন্তরঙ্গ ভাবে বসে আছে।এসব দেখে থাকতে না পেরে সেখান থেকে চলে আসে কাব্য।খুব খারাপ লাগছিল তার।অথৈকে অনেকবার ফোন দিলেও সে ফোন ধরেনি।
অনেককষ্টে রাতটা পার করে পরেরদিন ভার্সিটিতে যায় কাব্য।গিয়েই সরাসরি অথৈর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

কাব্য:এসব কি অথৈ?
অথৈ: কোনসব?(বিরক্ত হয়ে)
কাব্য:বুঝতে পারছ না?নাকি নাটক করছ?
অথৈ:যা বলার স্পষ্ট করে বল।
কাব্য:কাল তুমি কোথায় ছিলে বিকালে?
অথৈ:বাসায়
কাব্য: মিথ্যা কথা বলছ কেন?
অথৈ: মিথ্যা কথা মানে?
কাব্য:কাল তুমি পার্কে গিয়েছিলে।একটা ছেলের সাথে বসেছিলে।
অথৈ::তুমি জানলে কিভাবে?
কাব্য::আমি যেভাবে হোক জেনেছি।এবার বল তুমি ওখানে কি করছিল?কে ছেলেটা?
অথৈ:তাহলেতো তুমি সব জেনেই গেছ।যাই হোক,ও আমার নতুন বয়ফ্রেন্ড শুভ।
কাব্য::মানে?কি বলছ এসব তুমি?
অথৈ:যা বলছি সত্যি বলছি।
কাব্য:আমি তোমাকে ভালোবাসি অথৈ।কি বলছ এসব তুমি?
অথৈ:ভালোবাস?😒😒
কি যোগ্যতা আছে আমাকে ভালোবাসার মত তোমার?কি আছে তোমার?তুমি কোথায় আর আমি কোথায়।একবার আয়নায় গিয়ে নিজের মুখটা দেখ।

এরকম আরো অনেক কথা বলে সেখান থেকে চলে গেল অথৈ।কাব্য সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।পৃথীবিটা কেমন শূন্য মনে হচ্ছে।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বাসায় আসে কাব্য ।এসেই নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে।বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে তার।কাঁদতে কাঁদতে চোখ ও যেন শুকিয়ে গেছে।যাকে সে এতটা ভালোবাসলো সে তার সাথে এমন করতে পারল...
যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না তার।তার মাথাটা কেমন ভারী হয়ে আসছে।চোখ যেন অন্ধকার হয়ে আসছে।হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে গেল কাব্য।
জ্ঞান ফিরলে কাব্য দেখল সে তার বিছানায় শুয়ে আছে।পাশে তার মা বসে কান্না করতেছে।অভিও আছে।কি হয়েছিল অভিকে জিজ্ঞাসা করতেই,,,

অভি:তুই অনেকক্ষন ধরে দরজা খুল ছিলিস না।আন্টি অনেক টেনশনে পড়ে গিয়েছিল।তাই আন্টি আমাকে ফোন দিয়ে বলল।আমি এসে দরজা ভেঙ্গে দেখি তুই অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছিস।এরপর ডাক্তার এসে তোকে ঔষুধ দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে এনেছে।

আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে দিন।সময়ের সাথে পাল্টে যায়,কিন্তু পাল্টাতে পারে না কাব্য।আগের মত হাসি আনন্দে মেতে থাকে না।ঠিকমত কারো সাথে কথা বলে না।সারাদিন একা একা আনমনে বসে থাকে।একটা কঠিন কালো অন্ধকার গ্রাস করে কাব্যকে।এভাবেই চলতে থাকে কাব্যর দিনগুলো।শেষ হয়ে যায় টকটি সুন্দর জীবন।

No comments

Theme images by Mikey_Man. Powered by Blogger.