Wikipedia

Search results

সুরের বন্ধুত্ব

নিজের অবসর সময়টা ফেসবুকেই কাটাই।তাই ফেসবুক জগতে কিছুটা জনপ্রিয়তাও আছে।এমনি একদিন ফেসবুকে একটি আইডির নাম চোখে পড়ল।খুব অসাধারণ না হলেও আইডিটির প্রতি একটা আগ্রহ জন্মালো।তাই আইডির এবাউট চেক করলাম।ভালোই লাগল।তাই রিকু দিলাম।
এভাবেই কিছুদিন কেটে গেল।আমিও স্বাভাবিক ভাবে ফেসবুক চালাতে লাগলাম।
কিছুদিন পর আইডির মালিক রিকুটা এক্সেপ্ট করল।
আমি দেখেও কিছু লিখলাম না।যদিও রিকুটা আমিই পাঠিয়েছিলাম।
একদিন ওই আইডি থেকে একটি মেসেজ আসল,
আইডি:Hi
আমি:Hlw..
আইডি:কেমন আছেন?
আমি:ভালো।আপনি?
আইডি:ভালো।

এভাবেই কথা শুরু হল।
ও,আমার নামটাই তো বলা হয়নি আমি কাব্য।ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ি।আর যে আইডির সাথে ফেসবুকে কথা হচ্ছিল সে আইডির মালিকের নাম তিথি।

ফেসবুকে প্রায় সবসময়ই আমাদের মেসেজে কথা হত।এভাবেই দুজনে দুজনের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানলাম।জানলাম ও আমাদের গ্রামেই থাকে।(আমি পড়ালেখার জন্য শহরে থাকি)।
একসময় আমরা খুব ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম।মাঝে মাঝেই ওর সাথে আমার ফোনেও কথা হত।

কথা বলার সুবাদে আমি জানতে পারি ওর গিটারের প্রতি অনেক আগ্রহ।গিটার শুনতে নাকি ওর খুব ভালো লাগে।
কিন্তু আমি তখনও বলিনি আমি গিটার বাজাতে পারি।

এভাবেই কেটে যায় দিনগুলো আমার পরীক্ষাও ঘনিয়ে আসে।তাই আর ফেসবুকে ততটা থাকা হয়না।
আসলেও খুব কম সময়ের জন্য।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর চিন্তা করছিলাম একবার গ্রামের বাড়িতে যাব ঘুরতে।আমি বাড়িতে অনেক আগে গিয়েছি।সবকিছু মনও পড়ে না।ছোট ছিলাম তখন। হঠাৎ ইচ্ছে হল বাড়িতে যাওয়ার।আসলে উদ্দেশ্যটা শুধু ঘুরতে যাওয়া নয়।তিথির সাথে দেখা করা।
তাই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের দিনই রওয়ানা হলাম বাড়ির দিকে। তিথিকে কিছুই জানালাম না।
বাড়িতে গিয়ে আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম।তাই বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে এলাকার আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটিকে কল দিলাম।
(ওর সাথেও ফেসবুকেই যোগাযোগ হল।ছোট বেলা গ্রাম থেকে আসার পর আর কোন যোগাযোগ ছিলনা।)
আমি: হ্যালো।কেমন আছিস?
রাজ (আমার বন্ধু): ভালো।তুই?
আমি: আমিও ভালো।তুই কোথায়?
রাজ: বাড়িতে কেন?
আমি: আমি গ্রামে আসছি।তাড়াতাড়ি কাশেম চাচার চায়ের দোকানে আয়।(যখন আমি গ্রামে থাকতাম তখন কাশেম চাচার দোকানই ছিল আমাদের আড্ডাস্থল।সবাই মিলে আড্ডা দিতাম এখানে।এখন অবশ্য ওরা দেয় কি না জানিনা।)
আমি কাশেম চাচার দোকানে গিয়ে দেখলাম রাজ বসে আছে।আমাকে দেখে খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠল।
অনেক দিন পর দেখা হল।
এরপর সবকথা রাজকে বললাম।রাজ তো শুনে পুরাই অবাক।রাজ বলল,

রাজ: আচ্ছা।কাল সবাইকে খবর দিয়ে সব খবর নিয়ে ফেলব মেয়েটার।
আমি: আচ্ছা।
কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।ভাবলাম,তিথিকে সারপ্রাইজ টা কিভাবে দেওয়া যায়।এভাবেই বসে বসে কেটে গেল সারারাত।

পরদিন বিকেলে রাজ ফোন দিয়ে বলল কাশেম চাচার দোকানে আয়।আমি যেতেই,
রাজ: মামা,সব খবর তো নিয়া ফালাইছি।
আমি: কস কি।(আনন্দিত হয়ে)
এরপর রাজ তিথির সব খবর আমাকে বলল।আমি তো সেই রকম খুশি।হঠাৎ একটা চিন্তা মাথায় এল,এটাতো গ্রাম।এখানে তিথির সাথে দেখা করব কোথায়।সাধারণত গ্রামের মেয়েরা বাইরে বেশি বের হয় না।এই কথা রাজকে বলতেই রাজ বলল এখানে নাকি নতুন একটা পার্ক হয়েছে।সেখানেই যেতে।
শুনে খুব আনন্দ লাগল।সব প্রবলেম সল্ভড।এখন শুধু তিথির সাথে দেখা করার পালা।

পরদিন সকালে তিথিকে ফোন দিলাম।
আমি: হ্যালো, তিথি।
তিথি: হুম বল।
আমি: তুমি এখন কোথায়?
তিথি: বাড়িতে।কেন বলত?
আমি: একটু ----- পার্কে আসতে পারবে?(রাজের বলে দেওয়া পার্কে)
তিথি: কেন?
আমি: আসলেই জানতে পারবে।
তিথি: কিন্তু তুমি এই পার্কের কথা জানলে কি করে।এটাতো আমাদের গ্রামের পার্ক।
আমি: তুমি আগে আস।আসলে সব জানতে পারবে।
তিথি: আচ্ছা।( বলেই ফোনটা রেখে দিল)

প্রায় আধাঘন্টা পর দেখলাম তিথি আসতেছে।তাই আমি একটা গাছের পেছনে লুকিয়ে পড়লাম।তিথি এসে আমাকে খুঁজতে লাগল।হঠাৎ আমি পেছন থেকে তিথি বলে ডাক দিতেই চমকে উঠল ও।
আমাকে দেখে পুরো অবাক হয়ে গেল।ওর ঘোর কাটতে কিছুক্ষন সময় লাগল।
তিথির ঘোর ভাঙ্গতেই,
তিথি: তুমি এখানে?
আমি: হুম।কেন? আসতে পারিনা?
তিথি: না।সেটা না।কিন্তি তুমি হঠাৎ এখানে?বিশ্বাস হচ্ছে না।

আমি আমার আমার গিটার টা গাছের পিছন থেকে বের করে এনে একটা টিউন বাজালাম।

আমি: এবার বিশ্বাস হলো?
তিথি: তুমি গিটার বাজাতে পার?
আমি : হুম।
তিথি: আগে কখনো বলনিতো।
আমি : সারপ্রাইজ।।
তিথি: আমি আজ অনেক খুশি।অনেক সারপ্রাইজ হয়েছি আজ আমি।
আমি একটু মুচকি হাসলাম।এভাবেই চলতে থাকে কথা।
এই গিটারের বদলৌতে পেয়ে গেলাম ভার্চুয়ালেও খুব ভালো একজন বন্ধু।যা চিরন্তন।

No comments

Theme images by Mikey_Man. Powered by Blogger.