মধ্যবিত্তের ঈদ মার্কেট
ঈদের আর বেশি দিন নেই।কিন্তু এখনো কোন কিছুই কেনাকাটা করা হয়নি।অবশ্য হওয়ার কথাও নয়।কারন,মধ্যবিও ঘরে যাদের জন্ম তাদের সুখ থাকে সীমিত।তাদের পূর্নতাগুলোও অপূর্ণতায় রূপ নেয়।কিছু পাওয়ার পরেও
না পাওয়ার থেকে যায় অনেককিছুই।
এমন চিন্তাভাবনাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথায়।
হঠাৎ পাশের রুমের মা আর বোনের কথাবার্তায় বাস্তবে ফিরে এলাম।
বোন: মা সবাই তো ঈদের শপিং করে ফেলছে।আমরা কবে করব মা?
মা: করব মা।কালকেই করব।
বোন: মা এবার কিন্তু আমি সাথীর মত জামাটা কিনব।
(সাথী আমাদের পাশের বাসায় থাকে।ওদের পরিবার আমাদের থেকে স্বচ্ছল।একপ্রকার ধনীই বলা যেতে পারে।)
মা: আচ্ছা ঠিকাছে।তানিম কে বলব।
ওহো আপনাদের তো আমার পরিচয়টাই দেয়া হয়নি।আসলে পরিবারের কথা চিন্তা করতে করতে আর মা-বোনের কথায় একদম ভূলেই গিয়েছিলাম।
আমি তানিম।অনার্স তয় বর্ষে পড়ি।মা আর বোন নিয়ে আমাদের ছোট সংসার।বাবা মারা গেছেন অনেক আগে।বাবার জমানো কিছু টাকা আর আমার টিউশনির কিছু টাকা দিয়েই চলে আমাদের সংসার।
আমার বোন লাবন্য।দশম শ্রেণীতে পড়ে।ঈদের সময় সবারই ইচ্ছা হয় একটু ভালো কেনাকাটা করতে।পাশের বাসার সাথীর জামাটা দেখে হয়ত তারও ভালো লেগেছিল তেমনি।
যাক এরপর সারাদিনের কাজকর্ম শেষে রাতে যখন বাসায় আসলাম তখন মা আসল আমার রুমে।
মা: বাবা তানিম এবারের ঈদে তো কিছুই কেনা হয়নি এখনো।কাল তুই লাবন্যকে নিয়ে একটু বাজারে যাস।মেয়েটা কি একটা জামা কিনবে বলে শখ করেছে।
আমি: তুমি যাবে না মা?
মা: আমি বুড়ো মানুষ।আমি গিয়ে কি করব।তোরা দু ভাইবোনে মিলে কেনাকাটা কর।আমি এতেই খুশি হব। (বলেই মা চলে যাচ্ছিল)
আমি: মা একটু বসো।
মা : কেন? কিছু বলবি?
আমি: হুম। মা লাবন্য আজ পাশের বাসার সাথীর মত কি একটা জামা কিনতে চাইছিল। তাইনা?
মা: তুই কিভাবে জানলি? (অবাক হয়ে)
আমি: মা আমি সব শুনেছি। সমস্যা নেই মা।আমি কিনে দেব।(চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না।
মা: কাঁদিস না বাবা।আল্লাহ মুখ তুলে চাইবে একদিন।
(বলেই মা চলে গেল। আমি জানি সংসার চালাতে কতটা কষ্ট করতে হয় মাকে।তারওপর লাবন্য এমন একটা জিনিস চাইল।যাইহোক, আমার একটা মাত্র বোন।ওর শখটাকে তো পূরণ করতেই হবে।)
মাস শেষ হয়নি।তবুও টিউশনি থেকে চেয়ে আগে ভাগেই টাকা নিয়ে নিলাম।বিকালে বোনকে নিয়ে মার্কেটে বেরুব।
বাসে উঠলাম বাসায় আসার জন্য।বাসের ভাড়া দিতে যাব হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগটা নেই।পকেটমারি হয়ে গেছে।অনেক খুঁজলাম,তবুও পেলাম না।
অসহায় লাগছিল নিজেকে।কিছু বুঝতে পারছিলাম না।মানিব্যাগেই আমার সব টাকাগুলো ছিল।
অনেক খোঁজাখোজি করেও পেলাম না।মাথায় শুধু একটা চিন্তাই ঘুরছিল।সংসার চলবে কি করে।বোনকে জামাও বা কিনে দেব কি করে।
অনেক ভেবে কিছু বন্ধুর থেকে টাকা ধার করলাম।এরপর বাসায় চলে এলাম।এখনো কাউকে কিছু জানতে দেইনি আমি।মা শুনলে কষ্ট পাবে অনেক।
বিকেলে বোনকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম।অনেক দোকানে ঘুরলাম।কিন্তু ওর পছন্দমত ড্রেসটা পেলাম না।এভাবেই কিছু দোকান ঘুরতে ঘুরতে
একটা দোকানে গিয়ে ওর একটা ড্রেস পছন্দ হল।দোকানদারকে দাম জিজ্ঞেস করতেই বলল, একদাম ৩০০০ টাকা।
শুনেই মাথাটা কেমন যেন করতে লাগল।
আমি: ভাই কিছু কম হবেনা।
দোকানদার: না ভাই। একদাম।ঈদের সময় তো।
(আমি বোনের মুখের দিকে তাকালাম একবার।জামাটা পছন্দ হয়েছে ওর অনেক মনে হয়।তাকিয়েই আছে জামাটার দিকে।)
আমি: আচ্ছা।ঠিকাছে দিন।
জামাটা নিতেই লাবন্য অনেক খুশি হয়ে গেল।ওর খুশি দেখে আমার নিজেরই খুব ভালো লাগছে।
বোনের আবদার পূরণ করার মাঝে কি আনন্দ তা যাদের বোন আছে তারাই বুঝতে পারে।
লাবন্যকে জামাটা কিনে দিয়ে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনলাম।
পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম, আর বেশি টাকা নেই।
তাই লাবন্যকে নিয়ে বাসায় চলে যাব ভাবছি,
এমন সময় লাবন্য বলল,
ভাইয়া তোর জন্য কিছু কিনবি না?
আমি বললাম, পরে কিনব।এখন বাসায় চল।
এরপর বাসায় চলে এলাম।মা শাড়িটা পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে।কিন্তু যখন আমার কথা জিজ্ঞেস করল।আগের মতই বললাম পরে কিনব।বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম।নাহলে মা অনেক কথা জিজ্ঞেস করবে।
পকেটে আর বেশি টাকা নেই, কিন্তু আমার জন্য কিছু না কিনলে মা দুঃখ পাবে।তাই হাটতে হাটতে রাস্তার ফুটপাত থেকে সস্তার একটা পান্জাবি কিনে নিলাম।
বাসায় গিয়ে মাকে দেখানোর পর মা ও খুশি হল।কিন্তু শুধু জানল না কোথা থেকে কেনা পান্জাবিটা।
সবার কেনাকাটাই শেষ।এবার শুধু ঈদের প্রতিক্ষা।সেই গুরুত্বপূর্ণ দিন।যেদিন ধনী গরিবসহ সকল মানুষ একাকার হয়ে যায়।যেদিন শুধু আনন্দের দিন।খুশির দিন।
[মধ্যবিও পরিবারগুলোর জীবন হয় সবচেয়ে কষ্টকর।তারা না পারে ধনীদের মত চলতে, না পারে গরিবদের মত জীবনযাপন করতে।এই দুই শ্রেণীর মাঝে প্রতিনিয়তই জীবনের সাথে যুদ্ধ করে যায় ওরা।টিকে থাকে কঠিন বাস্তবতার মাঝে।
না পাওয়ার থেকে যায় অনেককিছুই।
এমন চিন্তাভাবনাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথায়।
হঠাৎ পাশের রুমের মা আর বোনের কথাবার্তায় বাস্তবে ফিরে এলাম।
বোন: মা সবাই তো ঈদের শপিং করে ফেলছে।আমরা কবে করব মা?
মা: করব মা।কালকেই করব।
বোন: মা এবার কিন্তু আমি সাথীর মত জামাটা কিনব।
(সাথী আমাদের পাশের বাসায় থাকে।ওদের পরিবার আমাদের থেকে স্বচ্ছল।একপ্রকার ধনীই বলা যেতে পারে।)
মা: আচ্ছা ঠিকাছে।তানিম কে বলব।
ওহো আপনাদের তো আমার পরিচয়টাই দেয়া হয়নি।আসলে পরিবারের কথা চিন্তা করতে করতে আর মা-বোনের কথায় একদম ভূলেই গিয়েছিলাম।
আমি তানিম।অনার্স তয় বর্ষে পড়ি।মা আর বোন নিয়ে আমাদের ছোট সংসার।বাবা মারা গেছেন অনেক আগে।বাবার জমানো কিছু টাকা আর আমার টিউশনির কিছু টাকা দিয়েই চলে আমাদের সংসার।
আমার বোন লাবন্য।দশম শ্রেণীতে পড়ে।ঈদের সময় সবারই ইচ্ছা হয় একটু ভালো কেনাকাটা করতে।পাশের বাসার সাথীর জামাটা দেখে হয়ত তারও ভালো লেগেছিল তেমনি।
যাক এরপর সারাদিনের কাজকর্ম শেষে রাতে যখন বাসায় আসলাম তখন মা আসল আমার রুমে।
মা: বাবা তানিম এবারের ঈদে তো কিছুই কেনা হয়নি এখনো।কাল তুই লাবন্যকে নিয়ে একটু বাজারে যাস।মেয়েটা কি একটা জামা কিনবে বলে শখ করেছে।
আমি: তুমি যাবে না মা?
মা: আমি বুড়ো মানুষ।আমি গিয়ে কি করব।তোরা দু ভাইবোনে মিলে কেনাকাটা কর।আমি এতেই খুশি হব। (বলেই মা চলে যাচ্ছিল)
আমি: মা একটু বসো।
মা : কেন? কিছু বলবি?
আমি: হুম। মা লাবন্য আজ পাশের বাসার সাথীর মত কি একটা জামা কিনতে চাইছিল। তাইনা?
মা: তুই কিভাবে জানলি? (অবাক হয়ে)
আমি: মা আমি সব শুনেছি। সমস্যা নেই মা।আমি কিনে দেব।(চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না।
মা: কাঁদিস না বাবা।আল্লাহ মুখ তুলে চাইবে একদিন।
(বলেই মা চলে গেল। আমি জানি সংসার চালাতে কতটা কষ্ট করতে হয় মাকে।তারওপর লাবন্য এমন একটা জিনিস চাইল।যাইহোক, আমার একটা মাত্র বোন।ওর শখটাকে তো পূরণ করতেই হবে।)
মাস শেষ হয়নি।তবুও টিউশনি থেকে চেয়ে আগে ভাগেই টাকা নিয়ে নিলাম।বিকালে বোনকে নিয়ে মার্কেটে বেরুব।
বাসে উঠলাম বাসায় আসার জন্য।বাসের ভাড়া দিতে যাব হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগটা নেই।পকেটমারি হয়ে গেছে।অনেক খুঁজলাম,তবুও পেলাম না।
অসহায় লাগছিল নিজেকে।কিছু বুঝতে পারছিলাম না।মানিব্যাগেই আমার সব টাকাগুলো ছিল।
অনেক খোঁজাখোজি করেও পেলাম না।মাথায় শুধু একটা চিন্তাই ঘুরছিল।সংসার চলবে কি করে।বোনকে জামাও বা কিনে দেব কি করে।
অনেক ভেবে কিছু বন্ধুর থেকে টাকা ধার করলাম।এরপর বাসায় চলে এলাম।এখনো কাউকে কিছু জানতে দেইনি আমি।মা শুনলে কষ্ট পাবে অনেক।
বিকেলে বোনকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম।অনেক দোকানে ঘুরলাম।কিন্তু ওর পছন্দমত ড্রেসটা পেলাম না।এভাবেই কিছু দোকান ঘুরতে ঘুরতে
একটা দোকানে গিয়ে ওর একটা ড্রেস পছন্দ হল।দোকানদারকে দাম জিজ্ঞেস করতেই বলল, একদাম ৩০০০ টাকা।
শুনেই মাথাটা কেমন যেন করতে লাগল।
আমি: ভাই কিছু কম হবেনা।
দোকানদার: না ভাই। একদাম।ঈদের সময় তো।
(আমি বোনের মুখের দিকে তাকালাম একবার।জামাটা পছন্দ হয়েছে ওর অনেক মনে হয়।তাকিয়েই আছে জামাটার দিকে।)
আমি: আচ্ছা।ঠিকাছে দিন।
জামাটা নিতেই লাবন্য অনেক খুশি হয়ে গেল।ওর খুশি দেখে আমার নিজেরই খুব ভালো লাগছে।
বোনের আবদার পূরণ করার মাঝে কি আনন্দ তা যাদের বোন আছে তারাই বুঝতে পারে।
লাবন্যকে জামাটা কিনে দিয়ে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনলাম।
পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম, আর বেশি টাকা নেই।
তাই লাবন্যকে নিয়ে বাসায় চলে যাব ভাবছি,
এমন সময় লাবন্য বলল,
ভাইয়া তোর জন্য কিছু কিনবি না?
আমি বললাম, পরে কিনব।এখন বাসায় চল।
এরপর বাসায় চলে এলাম।মা শাড়িটা পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে।কিন্তু যখন আমার কথা জিজ্ঞেস করল।আগের মতই বললাম পরে কিনব।বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম।নাহলে মা অনেক কথা জিজ্ঞেস করবে।
পকেটে আর বেশি টাকা নেই, কিন্তু আমার জন্য কিছু না কিনলে মা দুঃখ পাবে।তাই হাটতে হাটতে রাস্তার ফুটপাত থেকে সস্তার একটা পান্জাবি কিনে নিলাম।
বাসায় গিয়ে মাকে দেখানোর পর মা ও খুশি হল।কিন্তু শুধু জানল না কোথা থেকে কেনা পান্জাবিটা।
সবার কেনাকাটাই শেষ।এবার শুধু ঈদের প্রতিক্ষা।সেই গুরুত্বপূর্ণ দিন।যেদিন ধনী গরিবসহ সকল মানুষ একাকার হয়ে যায়।যেদিন শুধু আনন্দের দিন।খুশির দিন।
[মধ্যবিও পরিবারগুলোর জীবন হয় সবচেয়ে কষ্টকর।তারা না পারে ধনীদের মত চলতে, না পারে গরিবদের মত জীবনযাপন করতে।এই দুই শ্রেণীর মাঝে প্রতিনিয়তই জীবনের সাথে যুদ্ধ করে যায় ওরা।টিকে থাকে কঠিন বাস্তবতার মাঝে।
No comments