Wikipedia

Search results

লিডাররা কিভাবে টাইম ম্যনেজমেন্ট করবেন?

শৈবাল একটি টিমের লিডার।কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততায় সে তার টাইম সঠিকভাবে ম্যানেজ করতে পারে না।এর ফলে তার কাজগুলোর মাঝে সে সামন্জস্য করতে পারে না।যা তার লিডারশীপের জন্য একটি বড় বাধা।এই বাধা অতিক্রমের জন্য সে একটি ওয়ার্কশপে জয়েন করার চিন্তা করল।যথাসময়ে ওয়ার্কশপে সে উপস্থিত হল।

স্পিকার প্রথমেই বললেন, টাইম ম্যানেজমেন্ট মানে টাইমেকে ম্যানেজ করা নয়।টাইমকে ম্যানেজ করা যায় না।ম্যানেজ করা যায় এনার্জি বা শক্তিকে। শক্তি ছাড়া আমরা চলতে পারিনা।শক্তিই আমাদের সকল ক্ষমতার উৎস।এই শক্তি বা এনার্জি ৪ ধরনের হয়।

 Physical Energy বা শারিরীক শক্তি।এই শক্তি ম্যানেজ করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে

  •  ঠিকমতো ঘুমাতে হবে।অন্যথায় বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে।
  •  স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।
  •  নিয়মতিত শরীরচর্চা করতে হবে।
  •  প্রত্যেক ৪৫ মিনিট কাজের পর ৫ মিনিটি ব্রেক নিতে হবে।একটানা কাজের ফলে শরীরে জড়তা তৈরী হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।তাই পথটি অনুসরণ করতে হবে।

Mental Energy বা মানসিক শক্তি।এই শক্তি ম্যানেজ করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে

  •     নিজের ফোকাস ঠিক রাখতে হবে।
  •     মাল্টিটাস্কিং বন্ধ করতে হবে।এতে মনযোগ বিঘ্নিত হয় ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।
  •     নিজেকে খুশি করা যায় সেসব কাজ করতে হবে।এর ফলে মস্তিষ্কে সুখানুভূতি হয় ও মানসিক চাপ কমে যায়।

Emotional Energy বা আবেগপ্রবণ শক্তি।এই শক্তি ম্যানেজ করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে
  • নিজেকে জানতে হবে।সেল্ফ এওয়ারনেস বাড়াতে হবে।
  •  অন্যদের প্রশংসা করতে হবে।বিপরীতে নিজেও প্রশংসার দাবিদার হবেন।
  • গভীরভাবে নিশ্বাস নিতে হবে।এর ফলে ফুসফুসে ও মস্তিষ্কের পরিমিত অক্সিজেন যায় এবং সকল অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করে।

Spiritual বা আধ্যাত্মিক শক্তি।এই শক্তি ম্যানেজ করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে

  • জীবনের লক্ষ্য আবিষ্কার করতে হবে।
  • নিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কি তা বের করতে হবে এবং সেই বিষয়ের উপর কাজ করতে হবে।


লিডারদের জন্য টাইম ম্যানেজমেন্টের একটি টেকনিক হল "আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্স"। আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্সের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় Urgent & Important কাজগুলোকে।আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্সেট গ্রাফ ৪ টি ভাগে বিভক্ত। তা হল---

 * Do it now
 * Decide when do that work after
 * Pass another person
 * Delete



যখন একটি কাজ আর্জেন্ট ও ইম্পরট্যান্ট বেশি তখন তা এখনই করতে হবে। (Do it now).

যখন একটি কাজ ইম্পরট্যান্ট কিন্তু আর্জেন্ট নয় তখন সেই কাজটি সিডিউল করে রাখতে হবে পরে করার জন্য। (Decided when do that work after)

যখন একটি কাজ আর্জেন্ট কিন্তু ইম্পরট্যান্ট নয় তখন সেই কাজটি যোগ্য কাউকে দিয়ে দিতে হবে। (Pass another person)

যখন একটি কাজ ইম্পরট্যান্ট ও নয় আর্জেন্ট ও নয় তখন তা ডিলিট করে দিতে হবে। (Delete)

বিখ্যাত লিডাররা সবসময় আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করেন।তাদের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হল তারা একটি কাজ শুরু করলে তা কোন প্রকার বাধা ছাড়াই শেষ করেন।একটি কাজের মাঝে আরেকটি নিয়ে বসেন না।

স্পিকারের কথার একটি পর্যায়ে শৈবাল প্রশ্ন করে

শৈবালঃ  বিভিন্ন কাজ করার সময় মাঝে মাঝে কাজের গতি খুব দ্রুত হয় আবার মাঝে মাঝে কাজের গতিই থাকে না। সেক্ষেত্রে কি করা উচিত?

স্পিকারঃ কাজের গতি বৃদ্ধি হ্রাসকে আমরা Flow হিসেবে বিবেচনা করি।একটি গবেষণায় দেখা গেছে একজন মানুষ ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা পর্যন্ত Flow ধরে রেখে কাজ করতে পারেন।তাই আপনাকে আপনার সেই ৪ ঘন্টা বেছে নিতে হবে।সেই ৪ ঘন্টা হতে পারে একত্রে বা হতে পারে ভাগে ভাগে।কিন্তু সেই ৪ ঘন্টা বাধাহীনভাবে কাজ করে যেতে হবে।ভেঙ্গে ভেঙ্গে কাজ করতে চাইকে Promodoro Technique ব্যবহার করতে পারেন।

Promodoro Technique হলো কাজগুলোকে ভাগ করে নেয়া।২৫ মিনিট কাজ করার পর ৫ মিনিট রেস্ট এরপর আবার ২৫ মিনিট কাজ।এভাবে ৪ টি সাইকেল পূরণ করার পর একটা লম্বা ব্রেক নিবেন।এরপর আবার ব্যবহার করবেন।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রমোডোরো টেকনিক মানুষের কাজের ফ্লো ধরে রাখার জন্য খুবই কার্যকরী।একটি কাজকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নিবেন এবং সেখান থেকে ইন্টারেস্টিং ধাপগুলো আগে সম্পন্ন করবেন।তাহলে আপনার মধ্যে কনফিডেন্স বাড়বে ও উদ্যমী মন নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
প্রতিদিনের কাজের ফ্লো ধরে রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় সেট করে নিতে পারেন।দিনের ওই সময়টাতে প্রতিদিন আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করবেন।কারন প্রতিদিন আলাদা আলাদা সময় ফ্লো প্র্যাকটিস করলে তা কার্যকরি হবে না।বিজ্ঞান বলে ২৪ দিন একনাগারে একটি কাজ মানুষ নিয়মিত করলে তা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়।তাই প্রতিদিনের কাজের ফ্লো প্র্যাকটিস করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন।একটা সময় তা অভ্যাসে পরিণত হবে।ফ্লো ধরে রেখে কাজ করার জন্য আপনাকে আপনার প্রোডাক্টিভিটি লেভেল সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।আর এই ফ্লো ধরে রেখে কাজ করার সুবিধা হল -

  •  আপনি আপনার পারফর্ম্যান্স ইমপ্রুভ করতে পারবেন।
  •  শেখার মাধ্যমে নিজেকে ডেভলপ করতে পারবেন।

লিডারদের কাজের ক্ষেত্রে যে ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে 

  •  নিজের লক্ষ্য টা সুনির্দিষ্টভাবে লিখে ফেলতে হবে।
  •  কাজটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা ঠিক করতে হবে।
  •  কাজের ক্ষেত্রে কি কি বাধা বা চ্যালেন্জে আসতে পারে তা চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলো কিভাবে অতিক্রম করতে হবে তা সুনির্দিষ্ট ভাবে পরিকল্পনা করতে হবে।
  •  কাজের জন্য ডিসট্রাকশন ফ্রী স্থান বেছে নিতে হবে।

লিডারদের অবশ্য করণীয় কিছু বিষয়বস্তু 

  1. নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন।
  2. প্রোডাক্টিভিটি বাড়ায় এমন অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  3. দক্ষতা অর্জনের জন্য স্বয়ংক্রিয় হন।
  4. গভীর কাজের জন্য সময় তৈরী করুন।
  5. নিচু লেভেলের বা কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আলাদা একটি সময় সেট করুন।
  6. প্রজেক্ট নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
  7. দখাওয়ার জন্য সময় নিন।সবসময় কাজের মধ্যে ডুবে থাকবেন না।
  8. নিজের সারাদিনের কাঠামোটি তৈরী করুন সাকসেস পাওয়ার লক্ষ্যে।
  9. না বলতে কখনো ভয় পাবেন না।
  10. কাজের চাপে অনেক সময় অবসাদগ্রস্থ হতে পারেন।তাই নিজেকে রিচার্জ করা জন্য আলাদা সময় রাখুন।
  11. আপনার কাজের সুবিধার জন্য কোন বিষয়গুলো আপনাকে সাহায্য করছে তা চিহ্নিত করুন।


ধন্যবাদ

© এস.এ.প্রবাল

No comments

Theme images by Mikey_Man. Powered by Blogger.